সেলের সংযোগ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস-২ - জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস-২ | | NCTB BOOK

প্রতিটি বৈদ্যুতিক সেলে উৎপাদিত ডিসি ভোল্টেজের পরিমাণ সীমিত। বেশি পরিমাণের প্রয়োজনীয় ডিসি ভোল্টেজ পেতে এবং কারেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়াতে সেলের সংযোগ বা গ্রুপিং করা হয়। সেল গ্রুপিং এর প্রয়োজনীয়তা, প্রকার ভেদ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সেল সংযোগ : অনেক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কতকগুলো বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেলকে নিয়ম অনুযায়ী একত্রে সংযোগ করার প্রয়োজন হয়। একে সেলের সংযোগ বলে। সেলের এরূপ সংযোগকে একত্রে ব্যাটারি বলা হয়। ভোল্টেজ বৃদ্ধি, কারেন্ট বৃদ্ধি বা ভোল্টেজ ও কারেন্ট উভয়ই বৃদ্ধির চাহিদার উপর নির্ভর করে সেলের সংযোগ করা হয় ।

৩.৩ সেল সংযোগের শ্রেণিবিভাগ - সেলকে তিনভাবে সংযোগ বা গ্রুপিং করা যায়-

ক) সিরিজ সংযোগ, থ) প্যারালাল সংযোগ এবং গ) সিরিজ- প্যারালাল বা মিশ্র সংযোগ।

৩.৩.১ সেল সংযোগের প্রয়োজনীয়তা: সেলের সিরিজ সংযোগে ভোল্টেজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, আর প্যারালাল সংযোগে কারেন্ট এবং মিশ্র সংযোগে ভোল্টেজ ও কারেন্ট উভয়ই বৃদ্ধি পায়। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী বা ব্যবহারিক ক্ষেত্র অনুসারে সেলের প্রয়োজনীয় সংযোগ করে ব্যাটারি তৈরি করা হয়। প্রতিটি ড্রাই সেলের ইএমএফ ১.৫ ভোল্ট, নিকেল ক্যাডমিয়াম সেলের ইএমএফ ১.৪ ভোল্ট এবং লিড এসিড সেলের ইএমএফ ২.০ ভোল্ট হয়। আর অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটি সীমিত। ব্যবহারিক ক্ষেত্রের প্রয়োজন অনুসারে কতকগুলো সেলকে নিয়ম অনুযায়ী (সিরিজ বা প্যারালাল বা মিশ্র) সংযোগ করে ভোল্টেজ ও অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটি বাড়াতে সেলের সংযোগ করা হয়। কারেন্ট বৃদ্ধিতে সেলের প্যারালাল সংযোগ আর ভোল্টেজ বৃদ্ধিতে সিরিজ সংযোগ করা হয়। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সেলের সংযোগ বা গ্রুপিং খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৩.৩.২ সেলের সিরিজ সংযোগ (Series Grouping of Cell): যখন সেলগুলোর মধ্যে ১ম টির ঋণাত্মক

প্রাপ্ত ২য় টির ধণাত্মক প্রান্তের সাথে আবার ২য় টির ঋণাত্মক প্রান্ত ৩য় টির ধণাত্মক প্রান্তের সাথে এভাবে পর পর সংযোগ করা হয়, তখন সেলগুলোর এরূপ সংযোগকে সিরিজ সংযোগ বলে। ৩.২০ নং চিত্রে সেলের সিরিজ সংযোগ দেখানো হয়েছে।

চিত্র - ৩.২০ সেলের সিরিজ সংযোগ।

৩.৩.৩ সেলের সিরিজ সংযোগের গুরুত্ত্ব : প্রায় সকল ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি / যন্ত্রপাতির ডোস্টেজ রেটিং বেশি থাকে। বাজারে প্রাপ্ত সেলের ভোল্টেজ ১.৫ ভোল্ট। বেশি ভোল্টেজ রেটিং এর যন্ত্রপাতি চালাতে বেশি ডোস্টেজের ব্যাটারি প্রয়োজন হয়। সেলের সিরিজ সংযোগে ব্যাটারির ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী ভোল্টেজ বাড়াতে সেলের সিরিজ সংযোগ করা হয়। এ সংযোগে কারেন্ট ক্যাপাসিটি একই থাকে অর্থাৎ সার্কিটে প্রবাহিত কারেন্ট প্রতিটি সেলের সমান হয়। লোডের ভোল্টেজ বেশি প্রয়োজন হলে সেলের সিরিজ সংযোগে ব্যাটারি তৈরি করা হয় ৩.২০ নং চিত্র অনুযায়ী প্রতিটি ১.৫ ভোল্ট এর সেল সিরিজে সংযুক্ত করায় আউটপুটে ৬.০ ভোল্ট পাওয়া যায়। নিচের চিত্র ৩.২১ তে লোডসহ n সংখ্যক সেলের সিরিজ গ্রুপিং দেখানো হলো।

চিত্র - ৩.২১ লোডসহ সেলের সিরিজ সংযোগ ।

ধরি, সিরিজে সংযুক্ত প্রতিটি সেলের 

ইএমএফ =B 

প্রতিটি সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ =r

সংযুক্ত লোডের রোধ = R 

তড়িৎ প্রবাহ = I

এবং সংযুক্ত সেল সংখ্যা = n

তাহলে সিরিজে সংযুক্ত সেলের ই এম এফ = nE

বর্তনীর অভ্যন্তরীণ রোধ = nr

বর্তনীর মোট রোধ = R + nr

বর্তনীতে প্রবাহিত কারেন্ট, l=nER+nr

সবই প্রচলিত অর্থ বহন করে এবং সাধারণ এককে প্রকাশিত। সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ কম হলে সেলের সিরিজ সংযোগ বেশি কার্যকরী হয়।

৩.৩৪ সেলের প্যারালাল সংযোগ (Parallel Grouping of Cell): 

যখন কতকগুলো সেলের পজেটিভ বা ধণাত্মক প্রান্তকে এক বিন্দুতে এবং নেগেটিভ বা ঋণাত্মক প্রান্তগুলো অন্য আর এক বিন্দুতে সংযোগ করা হয়, তখন তাকে সেলের প্যারালাল সংযোগ বলে। প্যারালালে সংযুক্ত সেনসমূহের ইএমএফ একই হওয়া আবশ্যক। তা না হলে লোডে সংযুক্ত না করলেও ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যাবে। চিত্র- ৩.২২ এ সেলের প্যারালাল সংযোগ দেখানো হয়েছে।

চিত্র ৩.২২ সেলের প্যারালাল সংযোগ।

৩.৩.৫ সেলের প্যারালাল সংযোগের গুরুত্ব

আমরা যে সমস্ত ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করি সেগুলোর ভোল্টেজ রেটিং ও কারেন্ট রেটিং একই হয় না। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী কারেন্ট প্রবাহ বাড়াতে সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। অর্থাৎ যে সমস্ত যন্ত্রপাতির জন্য বেশি কারেন্ট প্রয়োজন হয় সে সমস্ত যন্ত্রপাতি পরিচালনায় সেলের প্যারালাল সংযোগ একান্ত প্রয়োজন। সেলের প্যারালাল সংযোগে ব্যাটারির ভোল্টেজ একই থাকে এবং কারেন্ট প্রবাহ বৃদ্ধি পায়; অর্থাৎ সার্কিটের ভোল্টেজ প্রতিটি সেলের সমান হয়। লোডের ক্ষমতা অনুযায়ী কারেন্ট প্রবাহ বাড়াতে সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। সেলের প্যারালাল সংযোগে প্রতিটির ইএমএফ বা বিভব পার্থক্য একই হওয়া প্রয়োজন। এ সংযোগে প্রবাহিত মোট কারেন্ট সবগুলো সেনের কারেন্টের যোগফলের সমান। অর্থাৎ ব্যাটারির কারেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়ে। দীর্ঘ সময় চালানোর জন্য সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। লোডের কারেন্ট বেশি প্রয়োজন হলে প্যারালাল সংযোগে ব্যাটারি তৈরি করা হয়।

নিচে চিত্র নং ৩.২৩-তে সেলের প্যারালাল সংযোগ দেখানো হয়েছে।

চিত্র ৩.২৩ লোড রেজিস্টরসহ সেলের প্যারালাল সংযোগ।

ধরি, প্যারালাল সংযুক্ত প্রতিটি সেলের ই এম এফ = E 

প্রতিটি সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ = r

সংযুক্ত লোডের রোধ = R, 

তড়িৎ প্রবাহ = I এবং 

সংযুক্ত সেল সংখ্যা = n

তাহলে, সেলগুলোর সংযোগে ব্যাটারির ইএমএফ =E (যেহেতু সেলগুলো প্যারালালে সংযুক্ত) =rn

বর্তনীর অভ্যন্তরীণ রোধ I=ER+rn

৩.৩.৬ সেলের সিরিজ-প্যারালাল বা মিশ্র সংযোগ :

চিত্র ৩.২৪ সেলের মিশ্র সংযোগ
Content added || updated By
Promotion